চুয়াডাঙ্গার গহেরপুরে দু’ভাইয়ের ড্রাগন চাষে অভাবনীয় সাফল্য
সাড়ে ৮ বিঘা জমিতে ২০ লাখ টাকা লাভের লক্ষ্যমাত্রা
গড়াইটুপি প্রতিনিধি: চারদিকে সবুজের সমারোহ। সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে সিমেন্টের খুঁটিতে ড্রাগনগাছ। শোভা পাচ্ছে গোলাপি, লাল আর সবুজ ফল। সাথী ফল হিসেবে পেঁয়ারা এবং একপাশে মাল্টা গাছ। ২০১৯ সালে সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ড্রাগনের চাষ শুরু। ১৫ মাসের মধ্যেই পাওয়া যায় ফল। প্রথম দফায় গত ২৬ রমজান বিক্রি করেন প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকার ফল। খুচরা বিক্রি করি সাড়ে ৩শ টাকা প্রতি কেজি। এরপর আর সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি। এ বছরই আরও ৮ বিঘা জমিতে ড্রাগনের চাষ শুরু করেছেন তারা। আগামীতে ২০ লাখ টাকার টার্গেট তাদের। মৎস্য ও গরুর খামারের পাশাপাশি ড্রাগন চাষে বাণিজ্যিকভাবে অধিক মুনাফা অর্জন করে সফলতা দেখছেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের গহেরপুর গ্রামের মৃত খোরশেদ ম-লের ছেলে উজ্জ্বল হোসেন ও তার সহোদর রবিউল ইসলাম। অনলাইনে ড্রাগন চাষের পদ্ধতি ও বিভিন্ন এলাকায় চাষাবাদ দেখে কৃষি অফিসার তালহা জুবাইর মাশরুরের পরামর্শ ও সহযোগিতায় গত বছর ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রাম থেকে ৩ হাজার পিস ড্রাগন চারা রোপণ করেন উজ্জ্বল হোসেন ও তার সহোদর রবিউল ইসলাম। ৭শ’ সিমেন্টের খুঁটিতে বেড়ে উঠেছে। নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে ১৫ মাসের মধ্যে গাছে সুপার ফুড হিসেবে খ্যাত ড্রাগন ফল ধরে। গত ২৬ রমজানে ২২ মণ ১৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি করে। এরপর আরও ৮ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ শুরু করেন। বার্ষিক ২০ লাখ টাকা বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। খরচ ৫ লাখ টাকা বাদে ১৫ লাখ টাকা লাভ হবে বলে তিনি আশাবাদী। পাইকারি ৩ থেকে সাড়ে ৩শ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এই ফল ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে ৭শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাদের অভাবনীয় সফলতা রীতিমত তাক লাগিয়ে দিয়েছে। যার কারণে এলাকার আশপাশেও ড্রাগন চাষের প্রতি ঝুঁকছেন শিক্ষিত বেকার ও সাধারণ চাষিরা।
উল্লেখ্য, প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার থাকলে সেটা হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। বর্তমানে অনেকেই করোনার কবল থেকে মুক্তি পেতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ওষুধ হিসাবে গ্রহণ করছেন। কিন্তু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ওষুধ হিসেবে গ্রহণ করার পরিবর্তে খাবার খাওয়ার মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবে শরীরে প্রবেশ করলে সবচেয়ে ভালোভাবে কাজ করে। প্রকৃতপক্ষে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ট্যাবলেট বা অন্য কোনো পরিপূরক চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ করা কখনোই উচিৎ নয় কারণ অনেক সময় এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তাই তো, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর চাহিদা পূরণে ড্রাগন ফল খাওয়া যেতে পারে। ড্রাগন ফল হলো বিশ্বের অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন কয়েকটি তাজা ফলের মধ্যে অন্যতম যা লৌহ সমৃদ্ধ। ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করার পাশাপাশি ড্রাগন রক্তে লৌহের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই ড্রাগন ফলের চাহিদাও ব্যাপক। বিদেশী ফল হিসেবে দেশের মাটিতে সুপার ফুড ড্রাগন চাষে ব্যাপক সাড়া যোগাচ্ছে। তাদের দেখা দেখি এলাকায় বেশ কয়েকটি মাঠে বাণিজ্যিকভাবে এ চাষ শুরু হয়েছে। কৃষি অধিদফতর ড্রাগন চাষিদের প্রতি সুদৃষ্টি রাখলে উত্তরোত্তর এ চাষের পরিধি বৃদ্ধি পাবে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন গ্রামের সাধারণ চাষিরা।