মাজেদুল হক মানিক: এক বিঘা জমিতে বাঁধাকপি আবাদে খরচ ২০-২৫ টাকা। আর সেই কপি ক্ষেত থেকেই বিক্রি হচ্ছে ৮০ হাজার থেকে এক ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। চারা তৈরি থেকে কপি তোলা পর্যন্ত সময় লাগে প্রায় ৯০দিন। এই অতি অল্প সময়ে বড় অংকের লাভ চাষিদের দিয়েছে স্বস্তি। কারণ পাট চাষে গেল বছর থেকেই লোকসানের মুখে পড়ে আছেন চাষিরা।
আগাম বাঁধাকপি চাষের এ চিত্র এখন মেহেরপুর জেলার। মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে চলতি মরসুমে জেলার তিন উপজেলায় ১৮৪ হেক্টর জমিতে বাঁধাকপি ও ৪৩ হেক্টর জমিতে ফুলকপি আবাদ করা হয়েছে। আগাম এই সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে এখন পাঠানো হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
চাষীরা জানান, এবার ভরা বর্ষা মরসুমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক কম। ফলে সবজি চাষের এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা নেই। অন্যদিকে পাট চাষে লোকসান হওয়ায় চাষিরা এবার আগাম কপি চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। এসময়টাতে যদিও সবজি আবাদ ঝুঁকিপূর্র্ণ কিন্তু বিভিন্ন ফসলের লোকসান তাদেরকে সাহসী করে তুলেছে। বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় কপি ক্ষেতে অন্য বছরের চেয়ে পচন রোগ অনেকাংশে কম দেখা গেছে। ফলে উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ার পাশাপাশি ফলনও বৃদ্ধি পেয়েছে।
মেহেরপুর জেলার সবজি আবাদের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছে সাহারবাটি গ্রামের নামটি। স্থানীয়ভাবে এ গ্রামের চারপাশের মাঠকে সবজির রাজ্য বলা হয়ে থাকে। সাহারবাটি গ্রামের চাষীরা এবার তাদের সুখস্মৃতির কথা জানিয়েছেন এ প্রতিবেদককে।
সাহারবাটি গ্রামের সবজি চাষি আব্বাস আলী জানান, এবছরে ঝুঁকি ছাড়াই আবাদ সম্পন্ন হচ্ছে। বৃষ্টিপাত কম থাকায় কপিতে বাম্পার ফলন হয়েছে। অন্যদিকে কীটনাশক খরচ ব্যাপকভাবে কমে গেছে। তাই আবাদ খরচ বাদে এক বিঘা জমিতে চাষিরা লাভ পাচ্ছেন ৭০-৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত। বিষয়টি অবিশ^াস্য হলেও সত্য।
চাষিরা জানান, সাহারবাটি গ্রাম ছাড়াও জেলার বিভিন্ন মাঠে এখন গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন আগাম সবজি চাষের দিকে চাষিদের মনোযোগ বেশি। কারণ হিসেবে চাষিরা জানান, শীতকালে সারা দেশেই সব রকম সবজি উৎপাদন হয়। এ সময়টাতে দেশের খুব বেশি জেলায় সবজি চাষ হয় না। ফলে সবজির চাহিদা ও দর থাকে অনেক বেশি। এ সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য মেহেরপুর জেলার অনেক চাষি শীতকালীন সবজি আবাদ কমিয়ে গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন আগাম সবজি চাষের দিকে ঘুরে যাচ্ছেন।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শংকর কুমার জানান, মেহেরপুর জেলার মাটিতে সব ধরনের ফসল আবাদ হয়ে থাকে। এখন যেসব জমি থেকে কপি তোলা হচ্ছে সেই জমিতে কয়েকদিন পরে আবারও একই আবাদ করা হবে। চাষিরা বছরে একটি জমিতে দুই তিনটি করে সবজি আবাদ করে থাকেন। কৃষি অফিসের প্রয়োজনীয় পরামর্শ আর চাষিদের ব্যতিক্রমী পদক্ষেপের ফলে আশানুরূপ লাভ মিলছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে জেলার চাষিরা আরও সম্মৃদ্ধ হবেন পাশাপাশি দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অব্যহত থাকবে।